“পরমকারুণিক যিনি, পরম-উৎস যিনি, তাঁরই উৎসৃষ্ট আমি। তাঁরই একটি কিরণ তুমি, একটি কিরণ আমি, একটি কিরণ এই ছায়াপথ, ঐ তারা, ঐ সব। যুগের শ্রেষ্ঠ পূরণকারী পুরুষকে যুগপুরুষোত্তম বলা হয়। তাঁরা হচ্ছেন পরমাত্মার দেহী প্রকাশ।
যুগের উপযুক্ত হয়ে তাঁরা যুগে যুগে নরলীলায় অবতীর্ণ হন।
বর্তমান যুগপুরুষোত্তমের মধ্যে পূর্ব্বতন সকলকেই সার্থকভাবে পাওয়া যায়। মহাপুরুষ মানে fulfiller the great (মহান পরিপূরক)। মাহাপুরুষের পূরয়মান হওয়া চাই। পুরুষোত্তম হলেন fulfiller the best (সর্ব্বোত্তম পরিপূরক)।
তাই আদর্শ হিসাবে পুরুষোত্তমই শ্রেষ্ঠ এবং গ্রহণীয়। কৃপা মানে করে পাওয়া। আমরা কিছু করলে তার ফল পাব। কৃপা ইত্যাদি কথার অপব্যাখ্যা হয়ে গেছে। ভগবান মানে ভজনবান। যিনি মূর্ত্ত ভগবান, তিনি ভক্ত। তিনি আর টের পাননা যে তিনি ভগবান – যদিও তিনিই তাঁর আসন। লোকে তাঁকে কয় অমনতর। সেইজন্য আছে –
ধর্ম্মপালন মানে ধৃতিপালন। তা নিত্য আচরণীয় ব্যাপার। ধর্ম্ম মানে যা ধরে রাখে। যাতে যে যার অস্তিত্ব বজায় রাখে তাই তার ধর্ম্ম। ধারণ, পালন, পোষণের মাধ্যমে সপারিপার্শ্বিক সুষ্ঠুভাবে বাঁচা-বাড়াই ধর্ম্মের মূল কথা।
সদগুরু মানে
ইষ্ট হচ্ছেন তিনি যাঁর কাছে আমি দীক্ষা নিয়েছি। আমার আচার্য্য, guide(চালক), আমি যাঁর ধ্যান করি।
দীক্ষা নেওয়া মানে দক্ষতালাভের কৌশল জানা। সেই কৌশল জেনে নিয়ে তদনুযায়ী অনুশীলন করতে হয়। জীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্য ভোগের প্রধান উপকরণ হলো প্রবৃত্তি, আবার প্রধান অন্তরায়ও হলো প্রবৃত্তি। প্রবৃত্তিগুলি সুখস্বাচ্ছন্দ্যলাভের অন্তরায় না হয়ে সহায়ক হয় কিভাবে, তার কায়দা জানা যায় সদগুরুর কাছে।
ধ্যান মানে হলো অনুরাগ মুখর ইষ্টচিন্তন; ইষ্টস্বার্থ ও ইষ্টপ্রতিষ্ঠার পরিপোষক ক’রে ভিতর-বাইরের যা কিছু নিয়ন্ত্রণ, সামঞ্জস্য ও সমাধানের বুদ্ধি স্থিরীকরণ।
এইভাবে চিন্তা করে বুদ্ধি স্থির করে কাজেও তা’ করা চাই। তাতেই হয় ধ্যান সার্থক, চরিত্রের ইষ্টানুগ বিন্যাসও হয় ওতে করেই। যা’ কিছু স্পন্দন বা ব্যোমতরঙ্গের বিভিন্ন রকম ও স্তরের প্রকট মূর্ত্তি, আর তারঙ্গিক প্রতিশব্দই হচ্ছে বীজমন্ত্র। বীজমন্ত্র জপে মানুষ ভিতর বাহির দুই দিকেই বিকশিত হ’য়ে ওঠে। তবে ইষ্টনিষ্ঠ হ’য়ে জপ না করলে বিকেন্দ্রীক বিক্ষেপ আসতে পারে।…সুকেন্দ্রিক হ’য়ে জপ না করলে বিক্ষিপ্ত হ’য়ে যায়। ভগবানই স্ত্রী-পুরুষ দুইই হয়েছেন। তবে এমনি ভেদ আছে। সমবিপরীত সত্তা। স্ত্রী-পুরুষের কোষই আলাদা। নারী পুরুষের যা কিছুকে sprout করায়(গজিয়ে তোলে)। পুরুষে থাকে জীবন-গুণপনা। মেয়েরা সেই গুণ ও সম্ভাবনাকে দেহে উদ্ভিন্ন ক’রে তোলে। আগে ছিল অর্দ্ধনারীশ্বর। পরে সংঘাতের ভিতর দিয়ে আলাদা হ’ল। যা’ করলে রক্ষা হ’তে পতিত হয় – তাই পাপ যা’ করলে অস্তিত্বকে রক্ষা করা হয় – তাই পুণ্য। যাতে মানুষ অন্যের বাঁচা-বাড়াকে নিষ্পেষিত না-করে নিজের বাঁচা-বাড়াকে সংবৃদ্ধির পথে চালিত করে অন্যকে সংবৃদ্ধ করে তোলে তাই করাই হচ্ছে প্রকৃত পুণ্যকর্ম এ গুলি হল কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ এবং মাৎসর্য। অষ্টপাশ হল – লজ্জা, ঘৃণা, মান, মোহ, দম্ভ, দ্বেষ ও পৈশুন্য। সদাচার পালনের যে কথা আছে, তা’ করলে সূক্ষ্ম সাড়াশীলতা বেড়ে যায়। স্নায়ুগুলির ক্ষমতা বেড়ে যায়। তখন মানুষ অনেক কিছু ধরতে পারে। সৎ মানে অস্তিত্ব, বিদ্যমানতা; চিৎ মানে বোধশক্তি, সাড়া দেওয়া ও নেওয়ার ক্ষমতা; আর আনন্দ মানে বৃদ্ধি। এইগুলির যুগপথ সমন্বয় ও সঙ্গতি চাই।
তোমার আছে শরীর, মন ও জীবনদীপনা। এই তিনটির যে concrete exposition (বাস্তব প্রকাশ) তাই তোমার সত্তা। আবার, যার সাথে তুমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছ তাও তোমার সত্তা। সে অর্থে তোমার বাড়ি, জমি এসবও তোমার সত্তার অংশ। মৃত্যুর সময় মানুষ একটা ভাব বা চিন্তার ভিতর লয় পেয়ে যায়। ঐ ভাব বা চিন্তার ভিতর যা’-কিছু deeper impression ও inclination (গভীরতর ছাপ ও ঝোঁক concentrated (একাগ্র) হ’য়ে থাকে। কোন দম্পতির মিলনকালে ঐ ভাবের সঙ্গতি যেখানে সৃষ্টি হয়, সেখানে তার আসা সম্ভব হয়। জন্মের পর প্রত্যেকের ভিতরই বিশেষ বিশেষ সংস্কার বা ঝোঁক দেখা যায়। সেগুলি জন্মজন্মান্তরে অর্জিত বলা চলে। ঐ সংস্কারের সঙ্গে তার পিতৃপুরুষের সংস্কারের সাধারণতঃ যোগ থাকে। তাই সে সেখানে আসতে পারে মুক্তি বলতে বুঝায় প্রবৃত্তি-পরায়ণতা থেকে মুক্তি, স্বার্থপর কামনাকলুষ থেকে মুক্তি। এ মুক্তির প্রয়োজন আছেই। এই দিক থেকে যে যতখানি মুক্ত, তার জীবন ততখানি দীপ্ত।
Mantra is a fundamental clue, meditating on which leads to the unfoldment of the cause ( মন্ত্র মানে সূত্রীকৃত সঙ্কেত, যার ধ্যান কারণকে উদঘাটিত করে ) মন্ত্রের উদগাতার প্রতি নিষ্ঠা নিয়ে অনুরাগভরে নিয়মিত মন্ত্রসাধন করলে wealth of perception (বোধবিভূতি) বেড়ে চলে। শ্রেয়কে আশ্রয় করে যে আন্তরিক টান তাকেই ভক্তি বলে। সন্তানের পিতৃভক্তি, মাতৃভক্তি স্ত্রীর স্বামীভক্তি, শিষ্যের গুরুভক্তি – এর কোনটাই ফেলনা জিনিষ নয়।
তোমার কর্ম্মফল যা’ তোমার দৃষ্টির বাইরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে তাই তোমার অদৃষ্ট মানুষের মাথায় অর্থাৎ স্মৃতির ভিতর স্বীয় অভ্যাস ও আচরণপ্রসূত যে-সব ছাপ থাকে, সেগুলিকে অনুধাবন ক’রে, বিচার ক’রে, গন্তব্য ঠিক ক’রে চলাই বিবেকের কাজ আল্লা মানে অল্ লা – সবকে যিনি গ্রহণ করেন। প্রেমের স্বভাবই হ’লো সবাইকে আপন ক’রে নেওয়া। কৃষ্ণ মানে যিনি আকর্ষণ করেন। ঐ একই কথা। রসুলও কৃষ্ণ। তিনি চেয়েছেন মানুষকে আল্লার দিকে আকৃষ্ট করতে। ঐ তাঁর একমাত্র কারবার। সেইজন্য রসুল ছাড়া পথ নেই। বাইবেলে আছে –
খাওয়ার ধর্ম্ম, পরার ধর্ম্ম, কামের ধর্ম্ম, স্বার্থধর্ম্ম – যা’ যা’ তোমাকে ধারণ ক’রে আছে, সেই সব। যে প্রভুকে রক্ষা করতে পারে না, সে নিজেকে বা অন্যকেও রক্ষা করতে পারে না। তাঁকে রাখলে, তিনিই সব রক্ষা করেন।
আধ্যাত্মিকতার মধ্যে ‘অধি’ আছে। অধির মধ্যে আছে ধা-ধাতু, মানে ধারণ-পোষণ। আর আত্মা হচ্ছে অত্- ধাতু থেকে, মানে গতি। সেইজন্য আত্মিক সম্বেগ মানে তাই যা তোমাকে mobile ( চলমান ) করে রাখে। আত্মিক শক্তিকে যা ধারণ ও পোষণ করে তাই-ই আধ্যাত্মিকতা।
মানুষের ওটাই goal ( লক্ষ্য ) । কত মানুষ মরেছে, এখনও মরছে,
তবুও মানুষ অমরত্ব বলে চিৎকার করতে ছাড়েনি। আমরা হিন্দুরা জন্মান্তর মানি। আমি যে এই জন্মেই নিঃশেষ হলে গেলাম তা নয়কো। এরও পর আছে। আবার জন্মাব,
জন্মায়ে আবার proceed করব ( এগিয়ে যাব )। জন্মান্তরেও যদি আমার স্মৃতিবাহী। চেতনা intact ( অব্যাহত ) থাকে, তাহলে অমরত্ব লাভ হল। মরে গেলেও যদি পূর্বজন্মের স্মৃতি পরজন্মে continue করে ( সচল থাকে ) তখন পূর্বের সবই চেনা সম্ভব।
হয়। আমি হয়তাে আগের জন্মে কলকাতায় ছিলাম, পরের বারে লন্ডনে জন্ম হলেও স্মৃতিবাহী চেতনা অক্ষুন্ন থাকলে আমি কলকাতার লােকদের চিনতে পারব। চেতনা নষ্ট হয় না। কবিরাজরা সে চেষ্টা করেছেন। অনেক কবিরাজী বইয়ের মধ্যে জরামৃত্যুরােধক অনেক জিনিষের কথা দেখা যায়। তার মানে, এই রবটা যে চলেছে তা বােঝা যায়। আৰ্যদের একটা সব সময়কার চেষ্টা ছিল জরা-মরণ রােধ করে অমৃতকে উপভােগ করার। এটাকে achieve করার ( পাওয়ার ) জন্য ওরা একেবারে determind ( স্থিরসঙ্কল্প ) ছিল। মানুষ উৎসবিমুখ হয়ে উঠলে বৃত্তি তাকে চেপে ধরে। মানুষ বৃত্তি-অভিভূত হলে সত্তাপােষণী চলন থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে, ঐ বৃত্তি সত্তারই রস নিঙড়ে
তা’ দিয়ে আত্মপুষ্টি করতে চায়। আমরাও বৃত্তি-সারূপ্য লাভ করে ঐ বৃত্তিকেই সত্তা মনে
করে তারই পুষ্টিসাধনে তৎপর হয়ে চলি। ফলে যা হবার তা হয়। পাপ মানে এমনতর
চলনা। ফলকথা, ঈশ্বর সৃষ্টি করলেও মানুষের ইচ্ছার উপর তার কোন হাত নেই।
আত্মহত্যা করা ব্যক্তির পুনরায় জন্মলাভ করা কঠিন হয় কারণ যে মানসিক অবস্থায় একজন মানুষ আত্মহত্যা করে, কোন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় তেমন ভাবভূমিতে থাকা সহজ হয় না। ফলে ঐ জীবাত্মার জীবনবৃদ্ধিদ গতি রুদ্ধ হয়ে যায়। ‘সুরত’ হল সত্তার আদিম সম্বেগ, libido
ব্রহ্ম হলেন অখন্ড ও সর্বাত্মক। তাঁর বাইরে কিছু নেই। যেখানে যা কিছু আছে, সব ব্রহ্মের মধ্যেই আছে। তাই ব্রহ্মজ্ঞান হ’লে কিছুই অজানা থাকে না। আর, সব জানাগুলির মধ্যে একটা সঙ্গতি হয়। কোন জানার সঙ্গে কোন জানার বিরোধ থাকে না। ব্রহ্মকে জানতে গেলে চাই ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষকে ভালবাসা।
পারে through attachment ( অনুরাগের ভিতর দিয়ে )। আমি আমার পূর্ব্ব-পূর্ব্ব জন্মের ও তৎসূত্রসঙ্গত পূর্বপুরুষের ধারা বহন ক’রে চলেছি।
উচ্চবর্ণের নারীর সঙ্গে নিম্নবর্ণের পুরুষের বিবাহকে বলে প্রতিলোম বিবাহ। শাস্ত্রে এ ধরণের বিবাহকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। কারণ প্রতিলোম-জাতক জাতি ও সমাজ বিধ্বংসী হয়। Less evolved sperm ( স্বল্প বিবর্ত্তিত শুক্রকীট ) যদি more evolved ovum ( অধিকতর বিবর্তিত ডিম্বকোষ ) এর fertilising agent হিসাবে কাজ করতে যায়, সেখানে biological law এর উপর একটা outrage ( অত্যাচার বা বলাৎকার ) করা হয়। তাই ovum সেখানে spermকে repel ( প্রতিরোধ ) করতে চায়। মিলনকালীন এই দ্বন্দের ফলে মাতৃধাতু ও পিতৃবীজের বৈশিষ্ট্য বিধ্বস্ত, বিকৃত ও বিপর্য্যস্ত হ’য়ে পড়ে।
সুকর্ম্ম তাই, যাতে মানুষের সু অর্থাৎ ভাল হয়। সত্তাপোষণী যা কিছু চিন্তা, ব্যবহার তাই সুকর্ম্ম।
উদ্দেশ্য হল being and becoming ( বাঁচাবাড়া )। এটা depend ( নির্ভর ) করে Ideal-এ ( আদর্শে ) surrender ( আত্মসমর্পণ ) এর উপর।
এই surrender ( আত্মসমর্পণ ) এর consummation ( চরমে ) আসে ঈশ্বরপ্রাপ্তি।
পূজা মানে সম্বর্দ্ধনা। শুধু নিরিবিলি মূর্তি বা পটের সামনে ফুল-বিল্বপত্র দিয়ে মন্ত্রপাঠ করলে পূজা হয় না।
কাউকে অনুসরণ করে বা কোন বিষয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে তাতে রঞ্জিত হয়ে ওঠাই তার প্রতি বা সেই বিষয়ের প্রতি অনুরাগ। ব্রাহ্মণত্ব লাভ মানে ব্রহ্মসাক্ষাৎকার- বৃদ্ধিসাক্ষাৎকার- কারণ সাক্ষাৎকার, কিসে কি হয় অর্থাৎ কাৰ্য্যকারণ-সম্বন্ধে তাদের জানা। এই জানা-মানুষকে বলে আচার্য্য।
আচাৰ্য্যকে ধ’রে, তাঁকে ভালবেসে, তাঁর কথা মত কাজ ক’রে অন্যেও ব্রাহ্মণ হতে পারে। ব্রাহ্মণ হ’লে সকলের পূজ্য হয়।
ইষ্ট না থাকলে মানুষের ইন্দ্রিয়গুলিও weak ( দুর্ব্বল ) ও sub-normal ( স্বাভাবিক অপেক্ষা ন্যূন ) হ’য়ে পড়ে, তাই খাওয়া-দাওয়াই হাে’ক বা sexual life ( যৌনজীবন )-ই হাে’ক—কোনটাই properly ( যথাযথভাবে ) enjoy ( উপভােগ ) করতে
পারে না। তাই সেদিক দিয়েও বঞ্চিত হয়। যার self-control ( আত্মসংযম ) নেই, সে
ভােগের বস্তু পেয়ে নিজেকে তার মধ্যে হারিয়ে ফেলে। যার নিজত্ব বজায় নেই, যে
নিজেই ‘নেই’ হয়ে গেছে, সে আর ভােগ করবে কি?
…দেখেন, সুখের ধারণা আমাদের কত বিকৃত হয়ে গেছে। মেয়ের বিয়ে যদি দিতে চাই—বরের বংশ ও ব্যক্তিত্বের
মেকদারের কথা বড় করে না ভেবে খুঁজি, কোথায় গেলে মেয়ে আমার রাজার হালে থাকবে, বামুন-চাকর, দাস-দাসী তার ফরমাস খাটবে, মাটিতে পা-টুকু ফেলতে হবে না, খাট-পালঙ্কে ব’সে হুকুম চালাবে। দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অভিযােগের লেশমাত্র থাকবে না। কিন্তু একথা ভাবি না—দুঃখ-দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে হয় করুক,
ভিক্ষা করে স্বামীকে খাওয়াতে হয় তা খাওয়াক, শ্বশুর-শাশুড়ী, আত্মীয়-পরিজনের সেবায় একমুহূৰ্ত্ত বিশ্রাম না পায়, তা’ না পাক, তার উপর দিয়ে অগ্নিপরীক্ষা চলে, তা’ চলুক, কিন্তু সে যেন অটুট ইষ্টপ্রাণ সদ্বংশজাত উপযুক্ত ছেলের হাতে পড়ে।
‘দেবতা’ এসেছে দিব্-ধাতু থেকে। তার মানে প্রকাশ। এক-এক গুণের অভিব্যক্তি এক-এক দেব-দেবী। ভগবান মানুষকে সুখও দেন না, দুঃখও দেন না। মানুষ যেমন করে, যেমন চায়, তেমনি পায়। দুঃখ যাতে পেতে হয়, তেমনভাবে চলে মানুষ মুখে-মুখে যদি সুখ চায় এবং সুখ না পাওয়ার জন্য আপশােষ করে, তাহলে বুঝতে হবে সে নিজেকে ও সেই সঙ্গে সঙ্গে অপরকেও প্রতারণা করছে। এত অকাম যে আমরা করি, তবুও কিন্তু পরমপিতা কাউকে তার দয়া থেকে বঞ্চিত করেন না। একজন পাপ করলাে বলে
প্রকৃতির অবদান সে কিন্তু কিছুই কম পায় না। বাতাসটা পূণ্যবানের জন্য বয়, পাপীর জন্য বয় না, সূৰ্য সৎলােককে আলাে ও তাপ দেয়, অসৎলােককে আলাে ও তাপ দেয় না—তা’ কিন্তু নয়। পরমপিতা সব সময় সবার ভালই করেন। মন্দের স্রষ্টা আমরা। তবে মন্দকে ভালয় পর্যবসিত করার শক্তিও পরমপিতা আমাদের হাতে দিয়ে দিয়েছেন। মানুষ অবিচার করতে পারে, কিন্তু তিনি কখনও অবিচার করেন না। [ আ. প্র. ১০ ]Ask Me
নাহং তিষ্ঠামি বৈকুন্ঠে যোগিনাং হৃদয়ে ন চ। মদ্ভক্তা যত্র গায়ন্তি তত্র তিষ্ঠামি নারদ।
যা’ নাকি অন্যের বাঁচা বাড়াকে নিজেরই আদর্শনিষ্ঠ বাঁচা বাড়ার মতন ক’রে তেমনি আকুল চাহিদায় সমুন্নত ক’রে তোলে-মানুষের জীবনে, ধর্মের ভিত্তিই হচ্ছে তা-ই
সম্প্রদায়ের সঙ্গে ধর্ম্মকে গুলিয়ে ফেলে আমরা ধর্ম্মের অপব্যাখ্যা করে চলেছি।
ধর্মে সবাই বাঁচে বাড়ে সম্প্রদায়টা ধর্ম নারে
He who knows the mechanism of existence যিনি
বাঁচার মরকোচ জানেন
আদর্শ মানে সদগুরু। আর পুরুষোত্তম হলেন সেই সদগুরু।তিনি মঙ্গল অনুধ্যানপরায়ণ।
মানুষের যাতে সর্ব্বতোভাবে ভাল হয় তাই তিনি করেন।
অস্তিত্বের ধারণ, পোষণ ও রক্ষণের তুক্ জানেন যিনি তাঁকে বলে সদগুরু। তাই দীক্ষা নেওয়া লাগে সদগুরু বা আচার্য্যের কাছ – যিনি আচরণ করে জেনেছেন। সদগুরুই আচার্য্য।
চেতনা ও আনন্দের বিকাশ ও বিস্তারের ভিতর দিয়েই সত্তা সার্থকতা লাভ করে।
মুক্তির সঙ্গে মরণের কোন সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক আছে জীবনের।
ভক্তির কোঠায় যে একবার পা দিয়েছে, সে-ই তরে যাওয়ার পথে উঠেছে। শক্তি বল, জ্ঞান বল – সব আসে ও থেকে
I am the way, the truth, the life – no one can come to the father except through me
দয়াকে পেতে গেলে দয়াবান ছাড়া পথ নেই
তাঁকে রাখা মানে তাঁর নীতিবিধি, স্বার্থপ্রতিষ্ঠা বজায় রেখে চলা
আধ্যাত্মিকতার মধ্যে physique (দেহ ) ও, spirit-এর (জীবনীশক্তির ) সুসঙ্গত চলন আছে
তিনি নিজে যেমন স্বরাট, স্বাধীন, প্রত্যেককে তেমনি স্বরাট, স্বাধীন করে দিয়েছেন, কাউকে কম করে দেননি কিছু। প্রত্যেককে তার মত করে ভ’রে উজার করেই দিয়েছেন। এখন সে স্বেচ্ছায় তৎপ্রদত্ত সম্পদ যে-কোন দিকেই নিয়ােজিত করতে পারে।
এ নিয়ে সে তঁন্মুখী চলনেও চলতে পারে, আবার তাকে অস্বীকার করে, তার দিকে পিছন ফিরিয়ে খেয়াল
ও ভােগােন্মত্ততার পিছনেও ছুটে চলতে পারে।
দুনিয়ার দিকে চাইলেও এটা আমরা স্পষ্ট বােধ করতে পারি।
বাপের থেকে জন্মেও বাপের অবাধ্য হওয়ার স্বাধীনতা ছেলের আছে,
এ স্বাধীনতা থাকলেও, এ স্বাধীনতার সুযােগ গ্রহণ না করে যে পিতাকে মান্য করে
চলে—সদভিদীপনা নিয়ে, সেই-ই উন্নতি লাভ করে।
এটি হল Urge of unification, মিলনের আকূতি – যা দিয়ে sperm এবং ova মিলিত হয়ে zygote form করে।
এই সুরতের সমস্ত সম্বেগ সদগুরুতে ন্যস্ত করাটাই বৃত্তি-নিয়ন্ত্রণের তুক্।ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ হলেন সম্যকদর্শী ও সর্ব্বদর্শী, তাই তিনি সর্ব্বস্বার্থী ও সমদর্শীও বটে।
আমি যদি এখন নিজেকে mould ( নিয়ন্ত্রিত ) করি, manipulate ( বিন্যস্ত ) করি, তার ভিতর দিয়ে আমার পিতৃপুরুষের ও নিজের অতীত ধারাই পরিবর্ত্তিত হ’য়ে চলে।
অনুরাগ হ’লে সে বৈরাগ্য !
নচেৎ বৈরাগ্যের মানে কি? অনুরাগ যখন আসে তখন সে তার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিকূল যা’ তার প্রতি বিরাগ বা বৈরাগ্য নিয়ে আসে।
ভগবানের উপর নেশা যে পরিমানে বাড়ে, শয়তানের উপর নেশা সেই পরিমাণে কমে।
সন্তান না পায় মায়ের ভালটা, না পায় বাপের ভালটা। সে কিম্ভূতকিমাকার পদার্থে পরিণত হয়।
সূৰ্য্যের প্রত্যেকটা কিরণের স্বার্থই সূৰ্য্য। সূৰ্য্য যদি ঢাকা পড়ে, তাহ’লে কিরণেরই অস্তিত্ব থাকে না।
তেমনি জীবনে পরিপূরণী শ্রেয় কাউকে ধরতে হয়। আর, যা-কিছু করতে হয়, তাঁরই স্বার্থের জন্য।
তাঁকে উপচয়ী করার জন্য বেকুবের মতাে ক’রে যেতে হয়। বেশি হিসেব-কিতেব ক’রে লাভ হয় না,
ঐভাবে তিনিই যখন আমার সর্বস্ব হয়ে ওঠেন, তাকেই বলে সুকেন্দ্রিক হওয়া। দ্বন্দ্বাত্মক বুদ্ধি যত খতম হয়,
বােধি তত উদ্ভিন্ন হ’য়ে ওঠে, প্রীতি তত প্রসার লাভ করে। গণজীবনের মালিক হ’য়ে
ওঠে সে।
যদি এমন কোন অসৎ কর্ম্ম থাকে, যা দিয়ে লোকের কল্যাণ হয়, তাও সুকর্ম্ম।
এর বিপরীত যা তা কুকর্ম্ম। যাতে মন সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, লোককল্যাণ ব্যাহত হয় তাই কুকর্ম্ম।তাই বলে, জীবনের উদ্দেশ্য ভগবানলাভ বা ঈশ্বরপ্রাপ্তি
গুরু ও গণের অর্থাৎ পারিপার্শ্বিকের বাস্তব সম্বর্দ্ধনা যাতে হয়, তাই করা চাই। তাতে শান্তি সুনিশ্চিত।
একজন শূদ্র যদি ব্রাহ্মণ বা ব্রহ্মজ্ঞ হয়, সেও বিপ্রের গুরু হ’তে পারে, কিন্তু জামাতা হ’তে পারে না। কারণ, ব্যক্তিগত সাধনার দিক দিয়ে সে উন্নততর হ’লেও পিতৃপুরুষাগত বীজ-সম্পদের দিক দিয়ে সে ন্যূন।
ব্রহ্মজ্ঞ সবকিছুরই explanation (ব্যাখ্যা) জানে। ধর, ঐ বকুল গাছটা (হাত দিয়ে দেখালেন)—এটা কেন, কী দিয়ে, কী ভাবে এমন হলাে, কী তার বৈশিষ্ট্য তা সে analytically (বিশ্লেষণাত্মকভাবে) ও synthetically (সংশ্লেষণাত্মকভাবে) অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে জানে।
তাই বৈশিষ্ট্য-অপঘাতী নীতি তাঁর কাছে কখনও সমর্থনলাভ করে না। Prophet (প্রেরিত)-দের সবারই এক কথা। তাঁরা সব সময় বৈশিষ্ট্যকে পালন করেন, সবকিছুর সামঞ্জস্য সাধন করেন। হিন্দু-মুসলমান ইত্যাদি বলে তাদের কাছে ভেদ থাকে না।
স্বর্গ মানে উত্তমে যাওয়া, উত্তমে থাকা, নরক মানে ক্ষয়-এ থাকা।
যারা সৎ চলনে চলে তারা দরিদ্র হ’য়েও অন্তরে স্বর্গসুখ ভোগ করতে পারে। আসুরিক বুদ্ধি যাদের, তারা ভোগসুখের মধ্যে থেকেও অন্তরে নরকবাসের যন্ত্রণা ভোগ করতে পারে।তপস্যার ভিতর দিয়ে ছাড়া মানুষ বড়ও হয় না, সুখীও হয় না। অনেকদিন পরাধীন থেকে থেকে এই ধারণাটাই আমাদের উবে গেছে। আমরা যে সুখ চাই, সে মানুষের সুখ নয়, পশুর সুখ। বাধাকে নিরােধ করে জয়ের নিশানা গড়ায় যে সুখ, সেই সুখই মানুষের কাম্য।